নবাবগঞ্জে হাট বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল উধাও

নবাবগঞ্জ(ঢাকা) প্রতিনিধি
পাইকারি, ডিলারগণ খুচরাবাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে চাহিদা থাকা স্বত্বেও বোতলজাত সয়াবিন তেল দিতে পারছেন না ভোক্তাদের মুদি ব্যবসায়ীরা। রাজধানী ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ হাট বাজারে এখন এমন কথাই শোনা যাচ্ছে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই। কিছুটা সংকট রয়েছে অধিকাংশ মুদি ব্যবসায়ীগন এমন কথা বলছেন। ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভোক্তা সাধারনের।

উপজেলার নবাবগঞ্জ বাজার, বাগমারা বাজার, পাড়াগ্রাম বাজার, শোল্লা বাজার, বান্দুরা বাজার, আগলা বাজার, সিংজোর বাজার, কোমরগঞ্জ বাজার, বারুয়াখালী বাজার, শিকারীপাড়া বাজারসহ গোবিন্দপুর, চুড়াইন, গালিমপুর , তুইতাল বাংলাবাজার এলাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুচরা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, তারা চাহিদামতো সয়াবিন তেলের সরবরাহ পাচ্ছেন না। কোম্পানিগুলো ঠিকমতো তেল দিচ্ছে না। ডিলারদের পাঁচ কার্টন তেল অর্ডার দিলে এক থেকে দুই কার্টন পাওয়া যায়। ফলে বাজারে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। তাদের কিছুই করার নেই।

এ বিষয়ে সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয়, খুচরা বাজারে চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে এই অবস্থা। খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, তারা চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ পাচ্ছেন না। তাই ভোগান্তি হচ্ছে ভোক্তাদের।

নবাবগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ হাট বাজারের মুদি দোকানগুলোতে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও বোতলের গায়ে মূল্য লেখার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বোতলের গায়ে মূল্য মুছে লিটার ১৯৫ টাকা চাইছেন। যার সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৭৫ টাকা। তবে এ বাজারগুলোয় খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। লিটার বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা। কিন্তু খোলা সয়াবিন তেলের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৫৭ টাকা।

বান্দুরা বাজারে সয়াবিন তেল কিনতে আসা গৃহবধু মিম আক্তার বলেন, ঘরে তেল নেই। তাই ভেবেছি ব্যাংক থেকে ফেরার সময় দোকান থেকে তেল কিনে বাড়ি ফিরব। কিন্তু (বুধবার) অধিকাংশ দোকানেই বোতলজাত সয়াবিন তেল পাইনি। তাই খালি হাতে বাড়ি ফিরেছি। ৫ টি দোকান ঘুরেও বোতলজাত তেল পাইনি। বোতলজাত সয়াবিন তেল রীতিমতো উধাও হয়ে গেছে। পাঁচটি দোকান ঘুরেও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাইনি।

পাড়াগ্রাম বাজারে তেল কিনতে আসা মো. হালিম বলেন, আমি সব সময় পাড়াগ্রাম বাজার থেকে কেনাকাটা করি। সেখানে বোতলজাত তেল নেই। পরে এলাকার মুদি দোকানে গিয়েও তেল পাইনি। এরপর বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে বোতলজাত তেল না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে খোলা সয়াবিন লিটারে ২০০ টাকা দিয়ে কিনে বাড়ি ফিরছি।

একই বাজারে কথা হয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মুদি ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশের ছয়থেকে সাতটি কোম্পানি তাদের ডিলারের কাছেতেল সরবরাহ করছে না। তিনি জানান, রোজায় বাজারে সব শ্রেণির মানুষ কেনাকাটা করে। আর এ সময় কোম্পানিগুলো তেল দিচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ি। এতে বাজারে কোনো বোতলজাত তেল নেই। নতুন করে দাম বাড়াতেই কোম্পানিগুলো এমন করছে। সরকার দাম বাড়িয়ে দিলেই বাজারে তেলের অভাব থাকবে না। ডিলাররাও আমাদের এমন কথা বলেছে।

উল্লেখ্য,গত ৯ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিল মালিকদের প্রস্তাবে সয়াবিন, পাম অয়েলের দাম সমন্বয় করেছে। তখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি আট টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ থেকে ১৭৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। এছাড়া, বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮১৮ থেকে বাড়িয়ে ৮৬০ টাকা করা হয়। কিন্তু এখন আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে এমটাই জানা যায়। আবার নতুন করে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে ক্রয়ক্ষমতা বহুগুণ কমে যাবে বলেন মনে করছেন দিনমজুর সাধারন মানুষ।

বোতলজাত সয়াবিন তেল উধাও হাট বাজার থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম বলেন,এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাচ্ছে না ভোক্তারা। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন বেশ কিছু হাট বাজারে অভিযান চালায়। এসময় খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, তারা চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ পাচ্ছেন না। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদের। নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে হাট বাজারগুলোতে বিশেষ দৃষ্টি রাখছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *